আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যেখানে মানুষ চা খাওয়ার আগেই ফোন চেক করে। খবরের কাগজ নয়, ফেসবুকের ট্রেন্ড-ই বলে দেয় কী নিয়ে দেশ উত্তাল।
এই যুগে কানেক্টিভিটি আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে—কিন্তু আসল প্রশ্ন, বিচার পেতে এখন ভাইরাল হওয়া বাধ্যতামূলক কেন?
উদাহরণ: লালচাঁদ শোহাগ
বয়স ৩৯। কাজ করতেন স্ক্র্যাপ ডিলার হিসেবে। পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে দিনে-দুপুরে পাথর মেরে হত্যা করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ? কিছুই না। হত্যাকারীরা? একটি রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনের কর্মী, এমন অভিযোগ। তার লাশের ওপর নাচও করা হয়।
- প্রথমে কী হয়েছিল?
- পুলিশ নিশ্চুপ।
- FIR তো দূরের কথা, অভিযোগই নেয়নি।
- মিডিয়াও একবার হালকা রিপোর্ট করে চুপ।
- তারপর?
- একটা ভিডিও ভাইরাল হয়।
- ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়
- মিডিয়া বাধ্য হয়ে কাভার করে
- ৫ জন গ্রেপ্তার, পরে আরও ৮ জন
- দল থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত হয়
- প্রশ্ন হলো:
- এত কিছু শুরু হলো যখন ভিডিও ভাইরাল হলো?
- এটাই কি বিচার পাওয়ার নতুন শর্ত?
Habermas-এর Public Sphere তত্ত্ব বলে, রাষ্ট্রের জবাবদিহি নিশ্চিত করে নাগরিকেরা, গণমাধ্যমের মাধ্যমে। কিন্তু যখন মিডিয়া চুপ করে যায়, তখন সেই জায়গা দখল করে সোশ্যাল মিডিয়া। এটাই Agenda-Setting Theory—কোন বিষয় সামনে আসবে, এখন ঠিক করে ফেসবুকের অ্যালগরিদম। এর পেছনে রয়েছে Structural Violence—প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষপাত, গড়িমসি, আর রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা।
কিন্তু ভাইরাল জাস্টিসের ফাঁকিগুলো কী?
- বিচার এখন সিলেক্টিভ – যেটা ভাইরাল না হয়, সেটার বিচারও হয় না।
- Trial by media – মানুষ তথ্য ছাড়াই রায় দিয়ে দেয়, ভুল লোক গ্রেপ্তার হলেও কেউ দেখে না।
- সিস্টেম আর ঠিক হচ্ছে না – ভাইরাল হলে হবে, এই বিশ্বাসে প্রতিষ্ঠান সংস্কার আটকে আছে।
- রিয়াকশন থ্রেশহোল্ড বেড়ে যাচ্ছে – আজকের ভাইরাল কালকের স্বাভাবিক। এরপর আরও ভয়াবহ কিছু না হলে কেউ রিঅ্যাক্টও করে না।
ভাইরাল ভিডিওতে বিচার পাওয়া উন্নয়নের প্রমাণ না, বরং প্রতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার চিত্র। আমরা চাই না, প্রতিটি হত্যাকাণ্ড ভাইরাল হোক বিচার পাওয়ার জন্য। আমরা চাই, প্রতিটি অভিযোগ ভাইরাল হোক বা না হোক, সমান গুরুত্ব পাক।
আপনারা কী ভাবেন? এই ট্রেন্ড চলতে থাকলে ভবিষ্যতের বিচার ব্যবস্থা কেমন হবে? মতামত দিন, শেয়ার করুন—কারণ সচেতনতা ছড়ানোই এখন সবচেয়ে জরুরি।