“When people fear the law, there is order. When the law fears the people, there is chaos.” — Tacitus
বাংলাদেশে গণপিটুনি বা মব জাস্টিস এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এটি ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি, যার শিকড় আইনের অকার্যকারিতা, বিচারহীনতা ও সামাজিক অসহিষ্ণুতাতে প্রোথিত।
মব জাস্টিস কী?
যখন জনগণ আইনকে পাশ কাটিয়ে নিজেরাই বিচারক ও শাস্তিদাতা হয়ে ওঠে। অপরাধ প্রমাণের আগেই সন্দেহের ভিত্তিতে শারীরিক নিগ্রহ বা হত্যা। প্রাতিষ্ঠানিক বিচার নেই, থাকে জনরোষ, গুজব আর ভ্রান্ত তথ্য!
কেন বাড়ছে?
- বিচারহীনতার সংস্কৃতি — মামলা ঝুলে থাকা, শাস্তিহীনতা, দায়মুক্তি।
- রাজনৈতিক অপব্যবহার — প্রতিপক্ষ দমনে জনতাকে উত্তেজিত করা।
- সামাজিক অসহিষ্ণুতা — ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, শ্রেণিগত বিভাজন।
- সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল — ভাইরাল পোস্টেই ‘অপরাধী’!
প্রমাণ ও সাম্প্রতিক ঘটনা
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও আইন ও সালিশ কেন্দ্র তথ্য: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮৭টি গণপিটুনি, নিহত ৩৯ জন। অনেক অভিযোগ পরে মিথ্যা/ভিত্তিহীন প্রমাণিত।
উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা:
- ৩ জুলাই ২০২৫, কুমিল্লা মুরাদনগর: একই পরিবারের ৩ জনকে মাদক ও মোবাইল চুরির অভিযোগে হত্যা।
- ২০ জুলাই ২০১৯, বাড্ডা, ঢাকা: সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে তাসলিমা বেগম রেণু হত্যা।
- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর: মোবাইল চুরির অভিযোগে মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জল ও শামীমকে পৃথকভাবে হত্যা।
- ৮ জুলাই ২০১৫, সিলেট: ১৩ বছরের রাজনকে চুরির অভিযোগে নির্মমভাবে হত্যা, ভিডিও ভাইরাল হয়ে দেশ-বিদেশে প্রতিক্রিয়া।
আইন আছে, প্রয়োগ নেই!
সংবিধানের ৩১ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ, ICCPR এর Article 6 ও 14 জীবনের অধিকার ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চয়তা দেয়।
বাস্তবে দণ্ডবিধি ১৮৬০, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০২৩ — সবই আছে, কার্যকর প্রয়োগ নেই। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, পুলিশের অদক্ষতা ও দুর্বল প্রতিষ্ঠান কাঠামো সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করছে।
করণীয়: প্রতিরোধ ও প্রতিকার
- আইনি ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ: হত্যা, আঘাত ও উস্কানির কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা; গণপিটুনির জন্য পৃথক আইন; দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
- প্রশাসনিক সংস্কার: পুলিশের নিরপেক্ষতা; মানবাধিকারভিত্তিক প্রশিক্ষণ; প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট।
- সামাজিক সচেতনতা: স্কুল-কলেজে মানবাধিকার শিক্ষা; গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার; ধর্মীয় ও সামাজিক নেতাদের মাধ্যমে জনসচেতনতা।
- ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ: সরকারি ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম; গুজব ছড়ানোকারীদের শাস্তি; সোশ্যাল মিডিয়ায় উসকানিমূলক পোস্ট পর্যবেক্ষণ।
- ভিকটিম ও পরিবার: আইনি, মানসিক ও আর্থিক সহায়তা; নিহতদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন।
মব জাস্টিস কোনো ন্যায়বিচার নয় — এটি কেবল নৈরাজ্যের উত্থান! আইনের শাসন ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মানই পারে এই ভয়াবহ প্রবণতাকে রুখতে।