একটি রাজনৈতিক দল জাতীয়ভাবে ৪১% ভোট পেয়েও সংসদে ১০% এরও কম আসন—এটা কি গণতান্ত্রিক ন্যায়বিচার?
বাংলাদেশে প্রচলিত First-Past-The-Post (FPTP) পদ্ধতিতে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পেলেই জয়ী হন, বাকি ভোট “অপচয়” হয়ে যায়। ফলে জনগণের কণ্ঠস্বর যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয় না।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation – PR) পদ্ধতিতে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মোট ভোটের অনুপাতে সংসদীয় আসন পায়। এতে:
- প্রতিটি ভোটের মূল্য থাকে
- ছোট দল ও নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মও সুযোগ পায়
- নারীর অংশগ্রহণ ও সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি পায়
- সরকার গঠনে জোট ও বহুবাদিতা উৎসাহিত হয়
বিশ্বব্যাপী বাস্তবতা: ৯০টিরও বেশি দেশ PR পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যেমন:
- জার্মানি ও নিউজিল্যান্ড (MMP)
- সুইডেন ও নরওয়ে (Open List PR)
- দক্ষিণ আফ্রিকা (Closed List PR)
- বেলজিয়াম ১৮৯৯ সালেই PR গ্রহণ করেছিল
বাংলাদেশে FPTP-এর সমস্যার বাস্তব প্রমাণ:
- ২০০১: আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রায় সমান ভোট পেলেও আসনসংখ্যা একেবারেই অসমান
- ২০০৮: ৪৮% ভোটে ২৬২টি আসন, আর ৩২.৫% ভোটে মাত্র ৩০টি আসন—এ বৈষম্য কোথায় গণতন্ত্র?
PR কেন প্রাসঙ্গিক?
- প্রতিটি ভোটকে সংসদে রূপান্তর করার সুযোগ
- সংখ্যালঘুদের ও ছোট দলের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হয়
- তরুণ, পেশাজীবী ও নারী নেতৃত্বের প্রবেশ সহজ হয়
সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ:
- সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব (যেমন ইতালি)
- দলীয় কেন্দ্রীকরণ (বিশেষ করে Closed List-এ)
- স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়া
- ছোট দলগুলোর অতিরিক্ত প্রভাব (যেমন ইসরায়েলে)
কিন্তু সবকিছু সত্ত্বেও—PR ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত করে তোলে।
এখন সময় এসেছে আত্মসমালোচনার—বর্তমান পদ্ধতি কি সত্যিই সবার কণ্ঠ শুনছে, নাকি কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠের?
প্রতিটি ভোট গণ্য হোক।
প্রতিটি কণ্ঠ সংসদে পৌঁছাক।
প্রতিটি নাগরিক যেন নিজেকে রাষ্ট্রশক্তির অংশ হিসেবে দেখতে পায়।
তথ্যসূত্র: Wikipedia, BBC Bangla, OECD Voting Dataset 2023, IDEA Handbook, Jugantor & Janakantha Reports